২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।এ অর্থের মধ্যে ছয় মাসে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় করার কথা ছিল তিন লাখ ১৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র এক লাখ ৪৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা, যা কিনা বাজেটের ২৫ শতাংশ। অর্থ বিভাগের এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রান্তিকে বাজেটের বাস্তবায়ন অত্যন্ত ধীর হলেও পরবর্তী তিন মাস (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রান্তিকে বাস্তবায়ন হার কিছুটা বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল যেখানে ১১ শতাংশ, সেখানে পরবর্তী তিন মাসে এই হার হয়েছে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে ৬৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। অন্যদিকে পরবর্তী তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়নের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে অর্থ বিভাগ আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, অর্থ বিভাগের এক লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৫২ কোটি টাকা)। এটি বরাদ্দের ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম ব্যয় করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ১৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র তিন কোটি টাকা, পুরোটাই পরিচালন ব্যয়।

অন্যদিকে, ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ছয় মাসে স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যয় করেছে দুই হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। এটি বরাদ্দের ৯ শতাংশ। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের বাজেট বাস্তবায়ন হতাশাব্যঞ্জক।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। ৩৬ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৫১১ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১,৮৪৬ কোটি টাকা)। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ৩৯ হাজার ২১৯ কোটি টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৪,৪৬৫ কোটি টাকা)।

অন্যান্যের মধ্যে ২৬ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৭২১ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১,২৯৭ কোটি টাকা)। ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে জননিরাপত্তা বিভাগ ব্যয় করেছে চার হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১৬৫ কোটি টাকা)।

৩২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে সড়ক পরিবহন বিভাগ ব্যয় করেছে চার হাজার ৮ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৩,৪৪৬ কোটি টাকা)। ১৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে তিন হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৫০৮ কোটি টাকা)। পাঁচ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে তিন হাজার ৩৭০ কোটি টাকা (এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা)।

একইভাবে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ ৯১৫৪ কোটি টাকা,ব্যয় ১৮১৪ কোটি টাকা (উন্নয়ন ব্যয় ৫৯৪ কোটি টাকা)। সমাজকল্যাণ বিভাগের বরাদ্দ ৯১২৩ কোটি টাকার বিপরীতে ব্যয় ১৭৬৩ কোটি টাকা (উন্নয়ন ব্যয় ৪৩ কোটি টাকা)। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ৬৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় ১,৫৫০ কোটি টাকা (উন্নয়ন ব্যয় ১,০১০ কোটি টাকা) সেতু বিভাগের বরাদ্দ ৯,৮২০ কোটি টাকা, ব্যয় ৯০৬ কোটি টাকা (উন্নয়ন ব্যয় ৯০৫ কোটি টাকা) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাদ্দ ৬,৩৪৫ কোটি টাকা, ব্যয় ৯৯১ কোটি টাকা (উন্নয়ন ব্যয় ৮৬৯ কোটি টাকা)।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৭০১ কোটি টাকা, ব্যয় ৬২ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ বরাদ্দ ২৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, ব্যয় ৮৯৫ কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২,০৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় করেছে মাত্র ৫০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোর মত চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার কম। তবে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে বাস্তবায়নের হার বাড়বে। আগে অর্থ ছাড়ে বিলম্বসহ নানা কারণে বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিতো। এখন অনেক কিছু সহজ হয়েছে। সে হিসেবে বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়ার কথা। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও করোনার নানা ভেরিয়েন্টের ফলে বাস্তবায়ন হার কম হচ্ছে।

 

কলমকথা/সাথী